1. admin@doeltv.com : admin :
শেখ হাসিনাকে কেন ফেরত দিতে চায় না ভারত? আল–জাজিরার বিশ্লেষণ - OnlineTV
শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:৩৮ অপরাহ্ন

শেখ হাসিনাকে কেন ফেরত দিতে চায় না ভারত? আল–জাজিরার বিশ্লেষণ

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ-
  • আপডেট টাইম : বুধবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৫
  • ১০০ বার পঠিত
শেয়ার করুন

চব্বিশের জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এরপরই দণ্ড কার্যকর করতে হাসিনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরত চেয়েছে বাংলাদেশ।

১৭ নভেম্বর সোমবার বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আজকের রায়ে পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল জুলাই হত্যাকাণ্ডের জন্য অপরাধী সাব্যস্ত হয়েছেন এবং দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত এই ব্যক্তিদের দ্বিতীয় কোনো দেশ আশ্রয় দিলে তা হবে অত্যন্ত অবন্ধুসুলভ আচরণ এবং ন্যায়বিচারের প্রতি অবজ্ঞার শামিল।’

মূলত, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট প্রবল আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন তিনি।

এদিকে শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার জন্য বারবার বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারত সরকারের কাছে অনুরোধ সত্ত্বেও তাকে ফেরত দেওয়া হয়নি। বিষয়টি ১৫ মাস ধরে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনার অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে। এখন হাসিনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার ঘটনায় এই উত্তেজনা নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদিও হাসিনার ফাঁসির রায়ের পর এক বিবৃতিতে হাসিনা–পরবর্তী বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী বলে জানিয়েছে।

তবে বেশ কয়েকজন ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেছেন, তারা এমন একটি পরিস্থিতি কল্পনাও করতে পারেন না যেখানে নয়াদিল্লি শেখ জাসিনাকে মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি করার জন্য বাংলাদেশে হস্তান্তর করবে।

ঢাকায় ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী প্রশ্ন রাখেন, ‘নয়াদিল্লি কীভাবে তাকে (হাসিনা) মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে?’

দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক প্রফেসর সঞ্জয় ভরদ্বাজ কাতার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে বলেন, ‘ভারত এই ঘটনাকে (হাসিনার মামলা) বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক শক্তিগুলোর রাজনৈতিক প্রতিশোধ হিসেবে দেখছে।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘ভারতের দৃষ্টিতে বাংলাদেশ এখন ভারত বিরোধীদের দ্বারা চলছে। প্রফেসর ইউনূস প্রায়শই ভারতের সমালোচনা করেছেন। যারা হাসিনাকে হটিয়ে দিয়েছে, সেই বিক্ষোভকারীরা হাসিনাকে সমর্থন দেওয়ার জন্য ভারতকে দোষারোপ করে। এই পরিস্থিতিতে যদি হাসিনাকে হস্তান্তর করা হয় তাহলে, যারা ভারত বিরোধীতা করছেন তাদের বৈধতা দেওয়া হবে।’

অন্যদিকে হাসিনার মৃত্যুদণ্ড ও আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরত চাওয়ার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে ভারত বলছে, হাসিনার রায়ের বিষয়ে ভারত অবগত হয়েছে এবং তারা সব সময় সব অংশীজনের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে যুক্ত থাকবে।

এতে আরও বলা হয়েছে, তারা বিশেষ করে শান্তি, গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তি এবং স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থ নিশ্চিত করার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তবে বর্তমানে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালো না। হাসিনার সময় দিল্লির সঙ্গে ঢাকার যে সমৃদ্ধশীল অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল, তা এখন অবিশ্বাসের সম্পর্কে রূপ নিয়েছে।

ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেছেন, শিগগিরই এ অবস্থার পরিবর্তন হবে বলে তিনি মনে করেন না।

আল–জাজিরাকে তিনি বলেন, ‘এই সরকারের (বাংলাদেশ) অধীনে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের টানাপোড়েন থেকে যাবে। কারণ, তারা বারবার বলতে থাকবে, ভারত আমাদের কাছে হাসিনাকে ফেরত দিচ্ছে না।’

পিনাক চক্রবর্তী মনে করেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন সূচনা হতে পারে। যদিও নির্বাচনে হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। বড় বিরোধী দল বিএনপিসহ অন্যান্য বড় রাজনৈতিক শক্তি ভারতের সমালোচক। তবু নির্বাচিত প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করাটা ভারতের জন্য স্বস্তির হবে।

শ্রীরাধা দত্ত বলেন, হাসিনার বিষয়ে ভারত জটিলতার মধ্যে পড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে তার প্রতি জনগণের ক্ষোভকে তারা উপেক্ষা করতে পারে না।

তার মতে, ভারত এখন নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে। যখন নির্বাচিত কোনো সরকার আসবে তখন হয়ত সম্পর্ক ভালো হবে। তিনি বলেন, “ভারতকে এখন অপেক্ষা করতে হবে। বাণিজ্য ও অন্যান্য বিষয়কে সম্মন্নত রাখতে হবে। কিন্তু অন্য বিষয়গুলো নিয়ে ঝামেলা করা যাবে না।”

ভারতের জিন্দাল গ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ প্রফেসর শ্রীরাধা দত্ত বলেন, ‘হাসিনার বিষয়ে ভারত জটিলতার মধ্যে পড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে তার প্রতি জনগণের ক্ষোভকে তারা উপেক্ষা করতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই নয়াদিল্লি চায় ভবিষ্যতে কোনো না কোনোভাবে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় ফিরুক এবং তিনি (হাসিনা) ভারতের জন্য সব সময়ই সর্বোত্তম পছন্দ। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ভারতকে মানতে হবে বাংলাদেশে হাসিনাকে আর কখনো সুযোগ দেওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। এর পরিবর্তে ভারতের উচিত, ঢাকার অন্য রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা।

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর
All rights reserved © 2022